নৈতিকভাবে দৃঢ় একটি সমৃদ্ধ ও শোষণহীন রাষ্ট্র গঠন করা ছিল স্বাধীনতার লক্ষ্য। কিন্তু সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিক অবক্ষয় হওয়ায় সেই লক্ষ্য আজ দূরে চলে গেছে। এ জন্য দেশে বিপ্লব ঘটাতে হবে নৈতিকতার। পরিবর্তন আনতে হবে পুরো সমাজ ব্যবস্থায়।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নৈতিকতা বিষয়ক কর্মশালায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে আইন বিভাগের প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, 'হয় আমি সৎ, না হয় অসৎ। এর মধ্যবর্তী কোন অবস্থান নেই। “আমি অত খারাপ নই” – এ কথা বলা যাবে না।' তিনি বলেন, পরিপূর্ণ নৈতিক রাষ্ট্র গঠন করতে হলে পুরো সমাজ-ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু উপরিকাঠামোয় পরিবর্তন আনলে চলবে না। তিনি বলেন, বৈষম্য, নিপীড়ন ও শোষণ বজায় রেখে সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মূল ভিত্তি হলো নৈতিকতা। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন নৈতিকতার সংকট চলছে, তখন কীভাবে নৈতিকতা অঙ্কুরিত করা যায়, লালন করা যায় এবং বাস্তব একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য মানুষের মেধা ও শ্রমের মূল্যায়ন নিশ্চিত করা দরকার।
কর্মশালার আইন ও নৈতিকতা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা দেশে যে আইন-কানুন করে গেছে, তার সঙ্গে দেশের বর্তমান অবস্থার মিল নেই। এর ফলে এমন একটি বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যার সঙ্গে জীবনের মিল নেই। আকবর আলি খান বলেন, 'আমাদের বিচার-ব্যবস্থা একটি জুয়ার আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এই জুয়ায় যারা বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তারা বাজি ধরে এবং নিরীহ লোকজনকে জেলে পাঠায়, তাদের সম্পত্তি ইত্যাদি গ্রাস করে।'
নৈতিকতা বিষয়ে আকবর আলি খান বলেন, নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা যা করছি, তা সঠিক কিনা, তা যদি নিজেই যাচাই করি, তাহলে নৈতিকতা সুদৃঢ় হবে। এথিকস ক্লাবের সভাপতি এম ই শামীম বলেন, ৫০ বছরের নৈতিক অবক্ষয় পূরণ করতে হলে ২০ বছর কাজ করতে হবে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন তাসলিমা মনসুর কর্মশালার উদ্বোধন করেন। কর্মশালায় আইনজীবী শাহদীন মালিক, এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা এ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।